বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৪ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ড্ট্কম:
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে শামীম বাহিনীর হাতে এক পাথর ব্যবসায়ী খুন হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নিহত পাথর ব্যবসায়ী পশ্চিম ইসলামপুর নয়া গাঙ্গেরপাড় গ্রামের ইব্রাহিম আলীর ছেলে শুকুর আলী (৩০)। বুধবার সকাল ৮টায় উপজেলার পাড়ুয়া এলাকায় এ হত্যাকান্ডটি ঘটেছে।
নিহতের স্ত্রী পিয়ারা বেগম জানান, তার স্বামী শুকুর আলীকে বিভিন্ন সময় স্থানীয় পাড়ুয়া গ্রামের বির্তকিত আওয়ামী লীগ নেতা শামীম আহমেদের ক্যাডাররা হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে গত ১৪ নভেম্বর কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। কিন্তু থানায় জিডি করেও শেষ রক্ষা হলো না শুকুর আলীর।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শামীম বাহিনীর বিরুদ্ধে জিডি হওয়ায় তেমন গুরুত্ব দেয়নি থানা পুলিশ।
তবে পুলিশ বলছে, নিহত শুকুর আলী ডাকাত ছিলেন। ডাকাতি ছেড়ে ভালোভাবে জীবন যাপন করার জন্য সম্প্রতি তিনি পাথর ব্যবসায় যুক্ত হন। তার দলের ডাকাতরাই তাকে খুন করতে পারে।
স্থানীয়রা জানান, যারা হত্যা মিশনে অংশ নেয় তাদের মধ্যে চারজনের নামে সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করেছিল নিহতের স্ত্রী পেয়ারা বেগম। তারা প্রত্যেকেই শামীম বাহিনীর সক্রিয় সদস্য। জিডির পরও ব্যবস্থা না নেয়ায় খুনের পর পুলিশের এমন ভূমিকায় প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। তাদের মতে, শামীম বাহনীর ক্যাডারদের বাঁচাতেই পুলিশ এখন এমন দায়সারা বক্তব্য দিচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শামীম বাহিনীর লোকজনের সঙ্গে পাথর ব্যবসায় আধিপত্য নিয়ে বিরোধ ছিল শুকুর আলীর।
বুধবার সকাল ৮টায় বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে করে কোয়ারি এলাকায় যাচ্ছিলেন শুকুর। এ সময় শামীমের বাড়ির অদূরে সড়কের ওপর পাড়ুয়া গ্রামের জামালের নেতৃত্বে হবিব, শাওন, শুকুর, রকিব, বুরহান, হুমায়ুন ও রাসেলসহ অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন শামিম বাহিনীর ক্যাডাররা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শুকুর আলীর ওপর হামলা চালায়। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্ত্রী পিয়ারা বেগম জানান, তার স্বামী প্রাণনাশের আশঙ্কায় থানায় যে জিডি করেছিলেন পুলিশ তার যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নিলে হয়ত আমার স্বামীকে খুন হতে হতো না। তিনি পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন।
কোম্পানীগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফতাব আলী জানান, শামীম বাহিনীর সঙ্গে পাথর কোয়ারিতে চাঁদাবাজি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ ছিল শুকুর আলীর। শামীম বাহিনীর সঙ্গে বিরোধ তৈরি হলেই তাকে শায়েস্তা করতে ডাকতির মামলায় আসামি করা করা হয় শুকুর আলীসহ উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক শাহ আলমকেও।
তিনি আরও বলেন, শুকুরের বিরুদ্ধে ডাকাতির মামলা থাকলেও আমার জানামতে তিনি এমন লোক ছিলেন না। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি পাথর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তার খুনের পেছনে শামীম বাহিনীর সঙ্গে পাথরকোয়ারি নিয়ে দ্বদ্বই প্রধান কারণ হিসেবে মনে করেন তিনি।
এদিকে শুকুরের ছোট ভাই আব্দুল খালিক জানান, শামীম বাহিনীর ক্যাডার হবিব কয়েকদিন আগে বিপুল পরিমাণ মদসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। হবিবের ধারণা শুকুর পুলিশকে তথ্য দিয়ে তাকে ধরিয়ে দিয়েছে। এ ধারণা থেকেই শুকুরকে নানা ভাবে হুমকি দেয়া হয়।
হবিব জেল থেকে বেরিয়ে এসেই শুকুরকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছিলেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
কোম্পানীগঞ্জর থানার ওসি তাজুল ইসলাম জানান, আদালতের অনুমতি ছাড়া তদন্ত করা যায় না। এখনো অনুমতি থানায় পৌঁছায়নি।
জিডিতে হুমকিদাতাদের নাম উল্লেখ থাকলেও এবং দিনের বেলায় প্রকাশ্যে এমন খুনের ঘটনা সম্পর্কে ওসি জানান, প্রাথমিক তদন্তে তারা মনে করছেন শুকুর যেহেতু ডাকাতি ছেড়ে ভালো পথে এসেছেন, এজন্য তার সঙ্গীরাই তাকে খুন করে থাকতে পারে।
শুকুর যে ডাকাতি করত সে প্রমাণাদি কিংবা আদালত তাকে ডাকাতি মামলায় কোন রকম সাজা প্রদান করেছেন কী না? জানতে চাইলে ওসি কোন রকম সদুওর দিতে পারেননি।